আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জার্মানির সেনাবাহিনীর আধুনীকিকরণের লক্ষ্যে সরকার যে বিশাল তহবিল গঠন করছে, প্রধান বিরোধী শিবিরের সঙ্গে সে বিষয়ে বোঝাপড়া সম্ভব হয়েছে৷ ফলে সংবিধানে রদবদলের পথে বাধা দূর হলো৷
ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলা শুরুর তিন দিনের মাথায় জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস জার্মান সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করতে ১০ হাজার কোটি ইউরো অংকের বিশেষ তহবিলের ঘোষণা করেছিলেন৷ সেই সঙ্গে ন্যাটোর মানদণ্ড অনুযায়ী বছরে জিডিপি বা মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের কমপক্ষে দুই শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়েরও অঙ্গীকার করেছিলেন৷ কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পথে গত প্রায় তিন মাসে অনেক বাধাবিপত্তি দেখা গেছে৷ বিশেষ করে বিশাল অংকের তহবিল ঠিক কোন কাজে ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে৷
এককালীন এই তহবিলের ব্যয়ভার মূল জাতীয় বাজেটের বাইরে রাখতে সংবিধানে রদবদলেরও প্রয়োজন পড়েছে, যার জন্য সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন৷ কারণ, বাড়তি ঋণের মাধ্যমে সেই অর্থ সংগ্রহ করা হবে৷ রবিবার বিরোধী ইউনিয়ন শিবিরের সঙ্গে অবশেষে বিষয়টি নিয়ে রফা করতে পেরেছে জার্মানির সরকারি জোট৷
শীতল যুদ্ধের অবসানের পর থেকে ধারাবাহিক ব্যয় সংকোচের ধাক্কায় জার্মান সেনাবাহিনী ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছিল৷ ১৯৯০ সালে প্রায় পাঁচ লাখ সৈন্য বুন্ডেসভেয়ারে সক্রিয় থাকলেও বর্তমানে সেই সংখ্যা প্রায় দুই লাখে এসে দাঁড়িয়েছে৷ সেই সঙ্গে সামরিক সরঞ্জামের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ বিকল হয়ে পড়েছে৷ বর্তমানে ৩০ শতাংশেরও কম রণতরি পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব৷ তার ওপর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সামরিক অভিযানে অংশ নিতে গিয়ে বাড়তি চাপের মুখে পড়ছে বুন্ডেসভেয়ার৷ ফলে জার্মানির প্রতিরক্ষা ও প্রয়োজনে ন্যাটোর সহযোগীদের সহায়তার ক্ষমতাও সীমিত হয়ে পড়েছে৷ ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের টনক নড়েছে৷
রবিবার জার্মানির সরকার ও প্রধান বিরোধী শিবিরের মধ্যে বোঝাপড়ার আওতায় ১০ হাজার কোটি ইউরো অংকের বিশেষ তহবিলের ব্যবহার স্থির করা হয়েছে৷ ফলে সেই অর্থ শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর আধুনীকিকরণের কাজে লাগানো যাবে৷ সাইবার নিরাপত্তা বা প্রতিরক্ষা কাঠামোর বৃহত্তর কোনো লক্ষ্য পূরণ করতে সেই অর্থ ব্যবহার করা যাবে না৷
বিশেষ তহবিলের বিষয়টি জার্মানির সংবিধানে অন্তর্গত করার লক্ষ্য স্থির করা হলেও বাৎসরিক প্রতিরক্ষা ব্যয়ের অঙ্গীকার সংবিধানের বাইরেই রাখা হচ্ছে৷ শলৎসের এসপিডি দলের নেতা সাসকিয়া এস্কেন বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, বাস্তবে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার সিদ্ধান্তের পর সেগুলি হাতে পেতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়৷ ফলে প্রতি বছর একই অংকের ব্যয় সম্ভব হয় না৷ তাছাড়া জিডিপি-র হিসেব করতেও সময় লাগে৷ তাই প্রতিরক্ষা ব্যয়ের ক্ষেত্রে গড় হিসেব প্রয়োগ করতে হবে৷
প্রতিরক্ষা খাতে জার্মানির দুর্বলতা কাটাতে চ্যান্সেলর শলৎস প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের উদ্যোগ নিলেও ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তার প্রশ্নে ঢিলেমির কারণে দেশে-বিদেশে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ছেন৷ এমনকি তার সরকার যে সামরিক সরঞ্জামের অঙ্গীকার করছে, বাস্তবে সেগুলির সরবরাহের ক্ষেত্রে দীর্ঘ বিলম্ব দেখা যাচ্ছে৷
মতিহার বার্তা/এমআরটি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.